রাজধানীতে বিরাজ করছে ছুটির আমেজ। চলবে টানা ১১ দিন। এবারের রোজার ঈদে সরকারি ছুটি থাকবে ৯ দিন। এর সঙ্গে যুক্ত হবে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার। সব মিলিয়ে ১১ দিন। বুধবার (২৬ মার্চ) স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটিকে উছিলা করে শুরু হয়েছে এই আমেজ। যদিও বৃহস্পতিবার একদিন সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত খোলা থাকলেও মেজাজটা ছিল ছুটির। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন রাজধানীবাসী। রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘরমুখী মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। শুক্রবার থেকে যাত্রীদের ভিড় আরও বাড়বে। গতকাল পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যেই রাজধানী ছেড়েছেন যাত্রীরা। আজ থেকে চলবে পাঁচ জোড়া বিশেষ ট্রেন। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রাজধানীর রেল স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের চাপ আগে দেখা গেলেও সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল তুলনামূলক ছিল অনেকটাই ফাঁকা। তবে মঙ্গলবার থেকে বাস টার্মিনালে যাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও চাপ কম।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর রাস্তাগুলোয় গাড়ি কম, বাজারে মানুষ কম, সড়কে নেই তেমন যানজট। মার্কেট-বিপণি বিতানগুলোতেও নেই অতীতের মতো ক্রেতার ভিড়। বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাট এবং কমলাপুর রেলস্টেশনেও নেই চোখে পড়ার মতো যাত্রীচাপ। ২৮ মার্চ (শুক্রবার) ও ২৯ মার্চ (শনিবার) সাপ্তাহিক দুদিনের ছুটি শেষে ৩০ মার্চ রবিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে ঈদের ছুটি। ঈদের ছুটি শেষে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খুলবে আগামী ৬ এপ্রিল রবিবার।
জানা গেছে, এ বছরের রোজার ঈদ বছরের প্রথম দিকে হওয়ায় রাজধানীতে বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীদের নেই পড়াশোনার চাপ। বই পেতে দেরি হওয়ায় অনেক স্থানে ঠিকমতো ক্লাসও চলছে না। এই সুযোগে অনেক অভিভাবক তাদের পরিবার আগেভাগেই দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে এবছর তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে বুধবার থেকে। তিন দিনের সরকারি ছুটিসহ এবার তাদের ছুটি ১০ দিন পর্যন্ত বাড়তে পারে।বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২৬ মার্চ থেকে ১৬১টি কারখানায় ছুটি শুরু হয়েছে। ২৭ মার্চ থেকে ৩৭৪টি, ২৮ মার্চ থেকে ৬৪৮টি এবং ২৯ মার্চ থেকে ৯২৪টি কারখানা ছুটি দেবে। তবে ২০৭টি কারখানা এখনও ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি। পাওনা পরিশোধ হয়ে গেলে এসব কারখানার শ্রমিকরাও চলে যাবে ঈদের ছুটি কাটাতে। স্কুল ও গার্মেন্টস ছুটির কারণে এবছর রাজধানীতে আগেভাগেই ঈদের ছুটির আমেজ শুরু হয়েছে। চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে।
এদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী রোজার ঈদের আগে সাপ্তাহিক দুদিনের ছুটিসহ টানা ১১ দিনের ছুটির কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ। ২৬ মার্চ (বুধবার) বিকালে ফাঁকা হতে শুরু করে রাজধানী ঢাকা। দীর্ঘ এই ছুটির ফাঁদটা তৈরি হচ্ছে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) থেকে।ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর ধরে ঈদের ছুটি নির্ধারণ করে রেখেছে সরকার। ঈদ উপলক্ষে এবারই সরকার প্রথম পাঁচ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। ২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী—ছুটি মূলত শুরু হয়েছে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন। এরপর ২৭ মার্চ একদিন অফিস খোলা। ২৮ মার্চ শবে কদরের ছুটি।
এবার ২৯ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে ঈদুল ফিতরের ছুটি। টানা পাঁচ দিনের ছুটি (২৯, ৩০, ৩১ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল)। এর ওপর মাঝখানে একদিন ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) সরকার নির্বাহী আদেশে ছুটি ঘোষণা করেছে। ৪ ও ৫ এপ্রিল (শুক্র ও শনিবার) দুদিনের সাপ্তাহিক ছুটি। সেই হিসাবে ২৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ দিনের টানা ছুটি।ইতোমধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। পবিত্র ঈদ উপলক্ষে আগেই পাঁচ দিন টানা ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। সেখানে এখন নির্বাহী আদেশে আরও একদিন ছুটি ঘোষণা করা হলো। এর ফলে এবার ২৮ মার্চ থেকে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিন ছুটি পাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩ এপ্রিল নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করলো। ছুটির সময়ে সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, জরুরি পরিষেবা, যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ সংশ্লিষ্ট সেবা কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবেন। হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এ সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবেন। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মীরা এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মীরাও এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবেন। জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসগুলো এই ছুটির আওতাবহির্ভূত থাকবে।এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর ও সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ২৯ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৮ দিন দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। তবে এই ৮ দিনের ছুটিতে বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দুই দেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। আগামী ৬ এপ্রিল থেকে যথারীতি কাস্টমস ও বন্দরের কার্যক্রম চলবে।এদিকে, ঈদের দিন ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকবে দেশের সব কাস্টমস হাউজ ও শুল্ক স্টেশন। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সীমিত আকারে চলমান রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দ্বিতীয় সচিব মুকিতুল ইসলাম এক পত্রে এ তথ্য জানান। পত্রে টানা ৮ দিন কাস্টমস ও বন্দর বন্ধ থাকলেও ঈদের দিন ছাড়া সরকারি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন আমদানি-রফতানি সংক্রান্ত কার্যক্রম সীমিত আকারে চলমান রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে এ ধরনের নির্দেশ পালন করা হলেও বেনাপোলসহ অন্যান্য কাস্টমস হাউজ ও শুল্ক স্টেশনে তা পালন করা হয় না। এখানে বন্দর ব্যবহারকারীরা সবাই ছুটিতে চলে যাওয়ায় সব কিছু বন্ধ থাকে।
বেনাপোলের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি মহসিন মিলন বলেন, বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সারা দিন বন্দরে কাজ চলেছে। তারপর থেকে বন্ধ বেনাপোল পেট্রাপোলের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য। কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ এলাকায় ঈদ করতে চলে যাবেন। অনেক আমদানিকারক ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে দেশের বাড়িতে যাবেন। তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত কোনও পণ্য খালাস নেবেন না। আগামী ৬ এপ্রিল থেকে আবার বন্দর ও কাস্টমসের কার্যক্রম সচল হবে বলে তিনি জানান।গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখী যাত্রীরা বাসের জন্য অপেক্ষা করলেও সংখ্যা ছিল কম। অনলাইনে টিকিট কাটা যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে এসে সরাসরি বাসে উঠছেন, ফলে কাউন্টারগুলোতে ব্যস্ততা কম দেখা গেছে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সকালে যাত্রী কম থাকলেও দুপুরের পর তা বাড়তে শুরু করে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারি কর্মচারী তোফাজ্জেল হোসেন জানিয়েছেন, অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় এবছর ঈদের ছুটির আমেজ রাজধানীতে বিরাজ করতে শুরু করেছে আগেভাগে। স্কুল কলেজ না থাকায় অধিকাংশ পরিবারই বাড়িতে চলে গেছে। যারা আছেন তারাও আজ চলে যাবেন। সুতরাং কাল থেকে পুরোপুরি ছুটির আমেজ বিরাজ করবে রাজধানীতে।রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় অটোচালক ফিরোজ মিয়া জানিয়েছেন, ঢাকায় তো ঈদের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। যাত্রী কম। স্কুল ও গার্মেন্টসগুলো আগেভাগে ছুটি হয়ে যাওয়ায় রাজধানী ফাঁকা হয়ে গেছে। আজ রাতের মধ্যে আরও ফাঁকা হয়ে যাবে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিবেদক/এনআইএন